স্বদেশ ডেস্ক:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভিটেমাটি ছাড়া হচ্ছেন সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারী চক্র। সুন্দরবন ও এর আশপাশের এলাকা থেকে মানবপাচার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এর পরই রয়েছে ঢাকা ও সিলেটের অবস্থান। এ ছাড়া পাচারকারীরা মানবদেহের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গ পাচারের অভয়স্থল হিসেবেও বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড ১৯-এর পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মন্দায় হতদরিদ্ররা মানবপাচারের ঝুঁঁকিতে আছেন।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) ২০২২ সালে বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ মন্তব্য করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনের বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে। গত মঙ্গলবার বৈশ্বিক ওই প্রতিবেদনটি ভিয়েনা থেকে প্রকাশ করা হয়। পর্যালোচনাসভায় শঙ্কা প্রকাশ করা হয়, মানবপাচারকারীরা বর্তমানে বাংলাদেশকে অঙ্গ পাচারের স্পট হিসেবেও বেছে নিয়েছে। এ ভয়াবহ অপরাধ থামাতে কাজ করতে হবে এখনই। মানবপাচার ঠেকাতে বিচার পরিচালনার জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন বক্তারা।
ঘটনা শনাক্ত হয়েছিল। কারণ পাবলিক স্পেসগুলো বন্ধ ছিল। বিধিনিষেধের কারণে পাচার আরও গোপন হয়েছে এবং ভুক্তভোগীদের অনিরাপদ অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে পাচারের শিকারদের শনাক্ত করা কঠিন হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ১৪১টি দেশের মানবপাচারবিষয়ক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে শনাক্ত করা পাচার মামলার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী, আঞ্চলিক এবং জাতীয় স্তরে মানবপাচারের নিদর্শন এবং প্রবাহের একটি প্রদান করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। প্রতিবেদেন মানবপাচারবিষয়ক ৮০০ মামলার সারাংশ বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মানবপাচার একটি আন্তঃসীমান্ত সমস্যা। তাই এ ধরনের জটিল সংকটের সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই। বিশেষ করে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা তাদের অপরাধের ধারায় পরিবর্তন এনেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মানবপাচারকারীরা লোকজনকে প্রলোভনে ফেলে ফাঁদে জড়িয়ে ফেলছেন। তাই মানবপাচার প্রতিহত করতে হলে আইন, বিধিসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিবর্তন আনার কোনো বিকল্প নেই।
ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেরিয়া বলেন, অনলাইনে মানবপাচারের নিয়োগ এবং সাইবার অপরাধের মাধ্যমে মানবপাচারের মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রতিবেদনটিতে। করোনা মহামারীতে এ পরিস্থিতি বেড়েছে। যেখানে মানবপাচারকারীরা আরও প্রযুক্তি-সচেতন হয়ে উঠছেন। তবে সফলভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা মানবপাচারকারীদের শনাক্ত, তদন্ত এবং বিচার করতে পারি।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৪১টি দেশের সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে মানবপাচারবিষয়ক এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ইউএনওডিসি। প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন দেশের আদালতের মানবপাচার সংক্রান্ত ৮০০টি মামলার বিশ্লেষণকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। অভিন্ন এ সমস্যা সমাধানের জন্য কোথায় কোথায় নজর দেওয়া দরকার, তা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে করোনা মহামারী মানবপাচারের ঝুঁঁকি কীভাবে বাড়িয়েছে, সেটা উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি মানবপাচারের মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আইওএমের প্রধান আবদুস সাত্তার ইসভ বলেন, অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও নারী ও শিশুর পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত মানুষ মানবপাচারের ঝুঁকিতে আছেন। কোভিড-১৯ মানবপাচারের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। মানবপাচার দমনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এবং নাগরিক সমাজকে যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল আলম শেখের সভাপতিত্বে আলোচনায় বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ অনু বিভাগ) তৌফিক ইসলাম শাতিল, ঢাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দূতাবাসের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মরিজিও সিয়ান, কানাডা হাইকমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সেলর ব্র্যাডলি কোটস, ইউএনওডিসি সদর দপ্তরের কর্মকর্তা এইমি কোমরিয়ে এবং এডুরিস মারকুয়েজ ও ইউএনওডিসি বাংলাদেশের জাতীয় কর্মসূচি সমন্বয়কারী মেহেদি হাসান।